Aller au contenu principal

জামাল খাসোগির গুপ্তহত্যা


জামাল খাসোগির গুপ্তহত্যা


সৌদি বংশদ্ভূত জামাল খাসোগি দি ওয়াশিংটন পোস্ট এর একজন সাংবাদিক ও লেখক ছিলেন, যিনি পূর্বে আল-এরাব নিউজ চ্যানেল এর সাধারণ ব্যবস্থাপক এবং মূখ্য সম্পাদকের পদে নিযুক্ত ছিলেন। তিনি সৌদি আরবের সরকারের প্রতিনিধি দ্বারা ২০১৮ সালের ২ অক্টোবরে ইস্তাম্বুলে অবস্থিত সৌদি দূতাবাসে গুপ্তহত্যার শিকার হন। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ অজানা কারণ তার দেহ এখনও উদ্ধার এবং পরীক্ষা করা যায় নি। সৌদি আরব, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং জার্মানি এর সরকার মনে করে যে খাসোগিকে হত্যা করা হয়েছে। বিশেষ করে তুরস্ক থেকে মনে করা হচ্ছে যে এই হত্যাকাণ্ডটি পূর্বপরিকল্পিত ছিল এবং কোন অজানা সৌদি দাপ্তরিক জামাল খাসোগিকে হত্যা করার জন্য সৌদি সরকারের সাথে জড়িত এমন প্রতিনিধিদেরকে নিযুক্ত করেন।

ঘটনাপ্রবাহ

খাসোগি দূতাবাসে গিয়েছিলেন তিনি আর তার বাগদত্তার পরিকল্পিত বিবাহ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করবার জন্য। তার অট্টালিকাটি থেকে বের হবার কোন সিকিউরিটি ক্যামেরা ফুটেজ পাওয়া যায়নি বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে তাকে নিখোঁজ ঘোষণা করা হয়। সেখানে দাবি করা হয়েছিল যে দূতাবাসের মধ্যেই জামাল খাসোগিকে গুপ্তহত্যা করা হয় এবং তার দেহকে টুকরো টুকরো করে কেটে বা অন্য উপায়ে তার চিহ্ন মুছে ফেলা হয়। সংবাদ মাধ্যমে খাসোগির উধাও হয়ে যাবার প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলে সৌদি আরব দাবি করে যে তিনি দূতাবাস পরিত্যাগ করেছিলেন এবং একই সাথে দেশটি জানায় যে তাদের কাছে জামাল খাসোগির সাথে কী হয়েছিল সে সম্পর্কে কোন তথ্য নেই। তুরস্কের সংবাদ মাধ্যম জামাল খাসোগির দূতাবাস থেকে বের না হবার সাক্ষ্যপ্রমাণ প্রকাশ করে। এরপর সৌদি আরব সরকার জামাল খসোগির অদৃশ্য হয়ে যাবার সাথে জড়িত থাকার ব্যাপারে অস্বীকার করে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এই হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে স্বচ্ছতা এবং যারা এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী তাদের দায়বদ্ধতা দাবী করেছে। এরই মধ্যে তুর্কি কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে তদন্তের সাথে জড়িত বিভিন্ন বিষয় সংবাদ মাধমে দিয়েছে যা সৌদি আরবের দাবিকে ভুল প্রমাণ করে। সৌদি আরবকে এখন গভীর তদন্ত, এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দ্বারা সত্যটি প্রকাশ করার জন্য অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপের মধ্যে রাখা হয়েছে যা আগে কখনও দেখা যায় নি। ১৫ অক্টোবরে সৌদি এবং তুর্কি পুলিসের দ্বারা দূতাবাসে একটি নিরীক্ষণ পরিচালিত হয়েছিল। তুর্কি অভিশংসকগণ প্রতিবেদন দান করেন যে তারা নিরীক্ষণের সময় গরমিলের সাক্ষ্যপ্রমাণ পেয়েছেন এবং এমন সাক্ষ্যপ্রমাণ পেয়েছেন যার থেকে এই প্রমাণিত হয় যে খাসোগিকে হত্যা করা হয়েছে। ১৮ দিন পর সৌদি সরকার তাদের কোনরকম সংশ্লিষ্ট না থাকার অবস্থান থেকে সরে আসে এবং স্বীকার করে নেয় যে হাতাহাতি এবং বাকবিতণ্ডার পর গলায় ফাঁস লাগার কারণে খাসোগি দূতাবাসে মারা যান। সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এই হত্যাকাণ্ডকে "দুর্বৃত্তের কার্য" হিসেবে প্রকাশ করা হয়।

ফলাফল

১৮ জন সৌদিকে গ্রেফতার করা হয়, যাদের মধ্যে ১৫ জনের একটি বিশেষ দল আছে। একজন অজ্ঞাতনামা সৌদি কর্মকর্তা বলেন, জেনারেল আহমেদ আসিরি তাদেরকে খাসোগির সম্মুখীন হতে এবং প্রয়োজনে আটক করে সৌদে আরবে পাঠিয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। ১৯ অক্টোবরে সৌদি অভিশংসক বিবৃতি দেন যে, একটি সৌদি-তুর্কি যৌথ তদন্তকারী দল এমন সাক্ষ্যপ্রমাণ পান যা থেকে প্রমাণিত হয় সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবেই কাজ করেছিলেন। সৌদি রাজবংশ এই হত্যার নির্দেশ দান বা অনুমোদন দানের কথা অস্বীকার করে। ৩১ অক্টোবর ইস্তাম্বুলের প্রধান অভিশংসক একটি বিবৃতি দান করেন যেখানে বলা হয় যে, খাসোগিকে দূতাবাসের অট্টালিকায় প্রবেশ করা মাত্রই গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যা করা হয় এবং তার শরীরকে বিভাজিত করে মিটিয়ে দেয়া হয়।

তুর্কি কর্তৃপক্ষ খাসোগি হত্যাকাণ্ড বিষয়ক একটি অডিও প্রকাশ করে যেখানে এই সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায় যে খাসোগিকে সৌদি রাজবংশের নির্দেশেই হত্যা করা হয়। কয়েকদিন পর ২০১৮ সালের ১৬ নভেম্বরে সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (সি.আই.এ.) এর সদস্যগণ যারা এই অডিও সাক্ষ্যপ্রমাণকে বিশ্লেষণ করেছিলেন, মন্তব্য করেন, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান খাসোগির গুপ্তহত্যার নির্দেশ দেন। ২০১৮ সালের ২০ নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি বিবৃতি দান করেন যেখানে বলা হয়, সি.আই.এ. এর প্রতিবেদন বিতর্কিত এবং খাসোগির মৃত্যু নিয়ে তদন্ত চালিয়ে যেতে হবে।

২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর সৌদি অভিশংসকগণের দপ্তর থেকে বলা হয় ১১ জন সৌদি নাগরিককে খাসোগিকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছে এবং এদের মধ্যে পাঁচ জনের মৃত্যুদণ্ড হবে, কারণ এটা নিশ্চিত করা গিয়েছে যে এই পাঁচ জন অপরাধটির নির্দেশ প্রদানে এবং সম্পাদনে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। অভিযোগ এই যে, খাসোগির ইস্তাম্বুলে সৌদি দূতাবাসে প্রবেশের পর তাকে একটি প্রাণঘাতি অধিক মাত্রার চেতনানাশক দেয়া হয়। এরপর পাঁচ জন সন্দেহভাজন ব্যক্তি খাসোগিকে বিভাজিত করেন এবং সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে একজন স্থানীয় সহযোগীকে খাসোগির দেহের অংশগুলোকে মিটিয়ে ফেলার জন্য দিয়ে দেন। সৌদি দাপ্তরিকগণ এটি অস্বীকার করেই যাচ্ছেন যে এই কাজে সৌদি রাজবংশ নির্দেশ প্রদান বা হত্যাকাণ্ডের অনুমতি দেবার সাথে জড়িত।

জার্মানি এবং নরওয়ে এই ঘটনার কারণে সৌদি আরবে অস্ত্র বিক্রয় করা বন্ধ করে দিয়েছে, এবং কানাডা সৌদি আরবের সাথে অস্ত্রচুক্তি বন্ধ করার কথা বিবেচনা করছে।

গুপ্তহত্যা

অনেকগুলো পুলিশ সূত্র অনুসারে, তুর্কি পুলিশ বিশ্বাস করে যে খাসোগিকে ইস্তাম্বুলে অবস্থিত সৌদি দূতাবাসে ১৫ জনের একটি দলের নির্যাতন ও হত্যা করে, যাদেরকে এই কাজটির জন্য সৌদি আরব থেকে পাঠানো হয়েছিল। একটি অজ্ঞাতনামা পুলিশ সূত্র দাবী করেছে যে মৃতদেহটি কেটে টুকরো টুকরো করা হয় এবং এরপর দূতাবাস থেকে পুরোপুরিভাবে সরিয়ে ফেলা হয়। আর এই পুরো ঘটনারই কাজটি সম্পন্ন করার প্রমাণ হিসেবে ভিডিও রেকর্ড করা হয়, এবং ভিডিও টেপটি দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। মিডল ইস্ট আই থেকে একজন অজ্ঞাতনামা সৌদির কথা বলা হয় যিনি বলেন, টাইগার স্কোয়াড নামে একটি দল খাসোগির আঙ্গুলগুলো তাদের মিশনটি সফল হবার সাক্ষ্যপ্রমাণ হিসেবে রিয়াদে মোহাম্মদ বিন সালমানের কাছে নিয়ে আসে।

৭ অক্টোবরে, তুর্কি দাপ্তরিকগণ খাসোগির হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত সাক্ষ্যপ্রমাণ প্রকাশ করার কথা দেয়। তুর্কি রাষ্ট্রপতির একজন উপদেষ্টা ইয়াসিন আকতায় প্রাথমিকভাবে বলেছিলেন যে তিনি বিশ্বাস করেন দূতাবাসে খাসোগিকে হত্যা করা হয়েছিল, কিন্তু ১০ অক্টোবরে তিনি দাবি করেন, "এখানে সৌদি আরবের উপর দোষ চাপানো হচ্ছে না"। এর ভিত্তিতে দ্য গার্ডিয়ান এর সাংবাদিকগণ বলেন, তুরস্ক সৌদি আরবের সাথে লাভজনক বাণিজ্যিক সম্পর্ক ও দুর্বল আঞ্চলিক সম্পর্কের ক্ষতি করতে চাইছে না। এরপর তুরস্ক দাবি করে যে দূতাবাসের ভেতরে হত্যাকাণ্ড চালাবার অডিও ও ভিডিও সাক্ষ্যপ্রমাণ তাদের কাছে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তুরস্কের কাছে এই অডিও ও ভিডিও সাক্ষ্যপ্রমাণ চেয়েছে। ঘটনাটি সম্পর্কে অবহিত ব্যক্তিদের মতে এই অডিওটি সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (সি.আই.এ.) এর প্রতিনিধিদেরকে দেয়া হয়, সি.আই.এ. এর একজন মুখপাত্র সকলের সামনে এটার সম্পর্কে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন।

তথ্যসূত্র

Collection James Bond 007


Text submitted to CC-BY-SA license. Source: জামাল খাসোগির গুপ্তহত্যা by Wikipedia (Historical)


Langue des articles




Quelques articles à proximité