Aller au contenu principal

জেলহত্যা


জেলহত্যা


জেলহত্যা বলতে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালের বাংলাদেশ অভ্যুত্থানের পরিকল্পনাকারী সেনা কর্মকর্তাদের দ্বারা কারাগারে আওয়ামী লীগের চার নেতাকে হত্যা করাকে হয় বোঝায়। চারজন হলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, সাবেক প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ও মুহাম্মদ মনসুর আলী এবং আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান।

পটভূমি

রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশ অভ্যুত্থানে নিহত হয় এবং আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে।

ইতিহাস বর্ণনা

১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ এবং কর্নেল শাফাত জামিল খোন্দকার মোশতাক আহমদ এবং শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিদের ক্ষমতা থেকে অপসারণের জন্য পাল্টা অভ্যুত্থান শুরু করেন। আওয়ামী লিগের সিনিয়র চার নেতাসহ প্রায় ৫০ জন আওয়ামী লিগ কর্মীকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রেখেছে সামরিক প্রশাসন। চারজন হলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, সাবেক প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ও মুহাম্মদ মনসুর আলী এবং আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত মুহাম্মদ কামারুজ্জামান । ১৯৭৫ সালের ৪ নভেম্বর জেলের আমিনুর রহমান চারজনকে তাদের আলাদা কক্ষ থেকে তুলে নিয়ে একটি কক্ষে রাখেন। আমিনুর তাদের জানান খন্দকার মোশতাক আহমদ সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধি তাদের সঙ্গে দেখা করবেন। কারাগারের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল মোসলেমউদ্দিনের নেতৃত্বে পাঁচজন সেনা কর্মকর্তাকে কারাগারে প্রবেশ করতে প্রত্যাখ্যান করলেও শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি খোন্দকার মোশতাক আহমদের নির্দেশে অনুমতি দেওয়া হয়। সেনা সদস্যরা মিছিল করে জেলে ঢুকে চার নেতাকে তাদের জেল সেলে গুলি করে হত্যা করে মোহাম্মদ মনসুর আলী ছাড়া বাকি সবাইকে। মুহম্মদ মনসুর আলীর আর্তনাদ শুনে এবং জেলের একজন প্রহরী মোতালেবকে পানির জন্য ডাকার পর জেলের প্রবেশপথে ফিরে আসা সেনা দলকে খবর দেয়। দলটি ফিরে আসে এবং তাদের কারাগারে আওয়ামী লীগের চার নেতাকে বেয়নেট করে হত্যা করে।

তদন্ত

চারটি খুনের বিষয়ে লালবাগ থানায় একটি প্রথম তথ্য প্রতিবেদন দাখিল করা হয় এবং এর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবিএম ফজলুল করিমকে ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। উপ-পুলিশ সুপার সাইফুদ্দিন আহমেদকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দিলেও তাকে কারাগারে যেতে দেওয়া হয়নি। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সরকারের আগ্রহের অভাবে তদন্ত এগোয়নি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তদন্ত শুরু হয় ১৯৭৫ সালের পর প্রথম আওয়ামী লীগ সরকার ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ও পুলিশের তদন্তের ফাইল উধাও। ঘটনার তদন্তের জন্য একটি বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন করা হয়েছিল কিন্তু তাদের তদন্ত সম্পূর্ণ করতে ব্যর্থ হয় এবং তাদের ফাইলগুলি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ ১৯৭৫ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সেনা কর্মকর্তাদের সুরক্ষা প্রদান করেছিল। মামলার তদন্তকারী হিসেবে দায়িত্ব পান অপরাধ তদন্ত বিভাগ এর আবদুল কাহার আকন্দ । ১৯৯৮ সালের ১৫ অক্টোবর জেল হত্যা মামলায় ২৩ আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করা হয়।

বিচার

শারীরিক অসুস্থতার কারণে আদালতে হাজির হতে ব্যর্থ হলে মেট্রোপলিটন দায়রা জজ মতিউর রহমান ৩০ সেপ্টেম্বর ২০০৪ তারিখে উপ-পুলিশ সুপার সাইফুদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সংসদ সদস্য কে এম ওবায়দুর রহমান এই বিচারকে হয়রানি বলে বর্ণনা করেছেন। দুই আসামি তাহেরউদ্দিন ঠাকুর ও শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন জামিনে ছিলেন। মহানগর দায়রা আদালত মামলায় ২০ আসামির মধ্যে ১৫ জনকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। মারফত আলী শাহ মোসলেমউদ্দিন ও আবদুল হাশেম মৃধাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। আবদুল মাজেদ, আহমেদ শরফুল হোসেন, একেএম মহিউদ্দিন আহমেদ, খন্দকার আবদুর রশিদ, মোহাম্মদ বজলুল হুদা, মোহাম্মদ কিসমত হাসেম, নাজমুল হোসেন আনসার, সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, শরিফুল হক ডালিম, এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী, র‌্যাব চৌধুরী ও রাশেদ চৌধুরী আসামি করা হয়। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে। মোহাম্মদ খায়রুজ্জামান, কে এম ওবায়দুর রহমান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, নুরুল ইসলাম মঞ্জুর ও তাহেরউদ্দিন ঠাকুরকে সব অভিযোগে নির্দোষ প্রমাণ করা হয়। ২৯ আগস্ট ২০০৮ বাংলাদেশ হাইকোর্টের বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী এবং বিচারপতি মোঃ আতাউর রহমান খান ২০০৪ সালের রায়ের আপিলের উপর একটি রায় দেন। আদালত শুধু মোসলেমউদ্দিনের সাজা বহাল রেখেছেন। আদালত একেএম মহিউদ্দিন আহমেদ, আবুল হাসেম মৃধা, বজলুল হুদা, মারফত আলী শাহ, সৈয়দ ফারুক রহমান এবং সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খানকে সব অভিযোগে নির্দোষ বলে প্রমাণ করেছেন। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। ২০১৩ সালে প্রধান বিচারপতি মোঃ মুজাম্মেল হোসেন, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি মোঃ আব্দুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এবং বিচারপতি মুহাম্মদ ইমান আলীর সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ রায় দেন। জেল হত্যা মামলার আপিল। বেঞ্চ মারফত আলী শাহ ও আবুল হাসেম মৃধার মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে যা বাংলাদেশ হাইকোর্ট বেঞ্চ প্রত্যাহার করে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, সরকার সুপ্রিম কোর্টের রায় কার্যকর করার চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগ সরকার জেল হত্যা মামলার অন্যতম আসামি মোহাম্মদ খায়রুজ্জামানকে ২০২২ সালে মালয়েশিয়া থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে যেখানে তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে এবং নূর চৌধুরী কানাডায়। আব্দুল মাজেদকে ২০২০ সালে আটক করা হয়

উত্তরাধিকার

৪ নভেম্বর বাংলাদেশে জেল হত্যা দিবস হিসেবে স্মরণ করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে আওয়ামী লিগ সারাদেশে কর্মসূচি পালন করেন।

তথ্যসূত্র


Text submitted to CC-BY-SA license. Source: জেলহত্যা by Wikipedia (Historical)


ghbass