Aller au contenu principal

সৃষ্টিচক্র (হিন্দু দর্শন)


সৃষ্টিচক্র (হিন্দু দর্শন)


হিন্দু সৃষ্টিচক্র বা হিন্দু সৃষ্টিতত্ত্ব বা মহাজগতত্তত্ত্ব মহাবিশ্বের অবস্থা, এর সময় চক্র, এর গঠন প্রভৃতির সহিত জীবন্ত সত্তার প্রভাবকে বোঝায়। তত্ত্বটি ব্ৰহ্মাণ্ডের সৃষ্টি ও ধ্বংস চক্ৰের ধারণা প্ৰদান করে। প্রাচীন ভারতীয় জ্যোতিষশাস্ত্রে (যেমন: সূর্যসিদ্ধান্ত) সৃষ্টিতত্ত্বের বর্ণনা রয়েছে। এছাড়াও বেদ (নাসদীয় সূক্ত, পুরুষ সূক্ত), উপনিষদ, মহাভারতে সৃষ্টিতত্ত্বের বর্ণনা পাওয়া যায়। পুরাণসমূহে মহাজগৎ সৃষ্টির বর্ণনা একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য। হিন্দু সৃষ্টিতত্ত্ব অনুযায়ী প্রায় ৮৬৪ কোটি বছর পরপর ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি ও ধ্বংস হয় এবং এই প্রক্রিয়া চক্রাকারে চলতে থাকে। প্রতিটি মহাবিশ্ব ৪.৩২ বিলিয়ন বছর সময়কাল ধরে স্থায়ী হয়। এই সময়কালকে এক কল্প বা ব্রহ্মার এক দিন বলা হয়। এক কল্পের সমান সময়কাল পরে আসে ব্রহ্মাণ্ডের প্রলয় বা রাত। সৃষ্টি ও ধ্বংসের মধ্যবর্তি সময়কে বলা হয় ব্রাহ্ম অহোরাত্র। এই কল্পসমূহ আবার অসংখ্য চতুর্যুগে বিভক্ত। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী বৰ্তমান কলি যুগ শেষে, প্ৰায় ৪,৩২,০০০ বছর পর ভগবান বিষ্ণুর অন্তিম অবতার কল্কি কলি যুগের সমাপ্ত করে নতুন সত্য যুগ শুরু করবেন।

অনেকে হিন্দু সৃষ্টিতত্ত্বের সাথে আধুনিক সৃষ্টিতত্ত্বের সাদৃশ্যের কথা স্বীকার করেন। তাদের মতে, বৰ্তমান ব্ৰহ্মাণ্ডের পূৰ্বে অসংখ্য ব্ৰহ্মাণ্ডের সৃষ্টি ও ধ্বংস হয়েছে, এবং ভবিষ্যতে অসংখ্য ব্ৰহ্মাণ্ডের সৃষ্টি ও ধ্বংস হবে। ক্রম বিকাশ, মহাকাশ বিজ্ঞান, জ্যোতির্বিজ্ঞান, সৃষ্টি প্রভৃতি ধারণাও হিন্দু সৃষ্টিতত্ত্বে পাওয়া যায়।

পদার্থ

প্রতিটি বস্তু তিনটি গুণের উপর অধিষ্ঠিত:

  • সত্ত্ব গুণ,
  • রজঃ গুণ ও
  • তমঃ গুণ

উৎস ও বিবরণ

ঋগ্বেদে বিশ্বজগত সৃষ্টি সম্পর্কে বহু তত্ত্ব উপস্থাপন করা হয়েছে। ঋগ্বেদের পুরুষসূক্ত অনুযায়ী, সৃষ্টির প্রকাশ হয়েছিল হিরণ্যগর্ভ নামক এক মহাজাগতিক অণ্ড বা ডিম স্বরূপ আদিগর্ভ থেকে যার মাঝে সমস্ত কিছু সুপ্ত অবস্থায় ছিল। এটি ব্রহ্মাণ্ড নামেও পরিচিত। এ সূক্তে বর্ণনা করা হয়েছে, পুরুষের বিরাট নামক বিশ্বরূপ হল সৃষ্টির উৎস। বিরাটের মধ্যে সর্বব্যাপী জ্ঞানের আবির্ভাব ঘটে এবং বিরাট থেকে বৈচিত্র্যের সৃষ্টি হয়। শেষের দিকের মন্ত্রগুলোতে বলা হয়েছে, পুরুষ নিজেকে আহুতি দিয়ে পক্ষী, বন্য ও গবাদি পশু, চার বেদ, মন্ত্রের ছন্দ সৃষ্টি করেন। তার মুখ, বাহু, জঙ্ঘা ও পা থেকে চার বর্ণের জন্ম হয়। পুরুষের মন থেকে চন্দ্র ও চোখ থেকে সূর্যের জন্ম হয়। তার মুখ ও নিঃশ্বাস থেকে ইন্দ্র ও অগ্নির জন্ম হয়। তার নাভি থেকে আকাশ, মাথা থেকে স্বর্গ, পা থেকে পৃথিবী ও কান থেকে অন্তরীক্ষের জন্ম হয়। এই সৃষ্টিকর্মের মাধ্যমে মানুষ, জাগতিক ও মহাজাগতিক সকল সত্ত্বার মধ্যে একত্ব স্থাপিত হয়। কারণ, সবই সেই একক সত্ত্বা পুরুষের অংশসম্ভূত। পুরুষসূক্তে আরো বলা হয়েছে, পুরুষের কৃত যজ্ঞের মাধ্যমে এবং যজ্ঞ থেকে জগৎ সৃষ্টি হয়েছে। এই আদি যজ্ঞ থেকেই যাবতীয় সৃষ্টি রূপ ধারণ করেছে। সপ্তদশ মন্ত্রে বলা হয়েছে যে, এই আদি যজ্ঞ থেকেই যজ্ঞের ধারণার উৎপত্তি হয়েছে। শেষ মন্ত্রগুলোতে সকল সৃষ্টির আদিশক্তি রূপে যজ্ঞের গৌরব ঘোষিত হয়েছে। নাসদীয় সূক্তও বিশ্বতত্ত্ব ও ব্রহ্মাণ্ডের উৎপত্তির ধারণার সঙ্গে জড়িত। বিশ্বসৃষ্টির বিষয়ে সূক্তটি ভারতীয় ও পাশ্চাত্য দার্শনিক মহলে প্রসিদ্ধ। ঋগ্বেদের নাসদীয় সূক্তে সৃষ্টিতত্ত্ব সুন্দরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। বিভিন্ন পুরাণেও বিশ্বজগৎ ও মানব সৃষ্টি সম্পর্কে বিভিন্ন বর্ণনার পাশাপাশি অসংখ্য মহাবিশ্বের ধারণা উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও শতপথ ব্রাহ্মণে, মনুসংহিতায়, ঐতয়ের উপনিষদে, সাংখ্য-দর্শনেও বিশ্বজগৎ ও মানব সৃষ্টি সম্পর্কে বিভিন্ন বর্ণনা রয়েছে।

সৃষ্টিক্রম

সৃষ্টির পূর্বাবস্থা

সাংখ্য দর্শন, মনুসংহিতা সহ অন্যান্য হিন্দুশাস্ত্রের সৃষ্টিক্রম বর্ণনা অনুযায়ী সৃষ্টির আদিতে স্থিত মূল প্রকৃতি ও পুরুষকে নিত্য সত্ত্বা বিদ্যমান ছিল। এই নিত্য সত্ত্বার কোনো সৃষ্টি বা ধ্বংস হয় না। এখানে প্রকৃতি হচ্ছে ত্রিগুণাত্বক এই ব্যাক্ত জগতের মূল কারণ যা অব্যাক্ত সূক্ষরূপে থাকে। সত্ত্ব (প্রকাশ), রজঃ (প্রবৃত্তি) ও তমঃ (নিয়মাত্মক) এই তিনটি গুণ একে অন্যকে অভিভূত করে এই অব্যাক্ত জগৎকে প্রকাশ করে ব্যাক্ত করে। এই প্রকৃতি ও প্রকৃতি হতে সৃ্ষ্ট বিকৃতি (ব্যাক্ত জগৎ) চেতনা রহিত অচেতন জড় রূপ। তার সাথে পুরুষের সংযোগ ঘটে। পুরুষ হচ্ছে সূক্ষ্ম, অব্যক্ত, নিত্য ও চৈতন্যরূপ সত্ত্বা। সৃষ্টির পূর্বে এই ভিন্ন অন্য কোনো সত্ত্বার অস্তিত্ব ছিল না। ঋগ্বেদের নাসদীয় সূক্তের ১০ মন্ডলের ১২৯ সুক্তে বলা হয়েছে,

  1. তৎকালে যাহা নাই তাহাও ছিল না, যাহা আছে তাহাও ছিল না পৃথিবীও ছিল না, অতি দূরবিস্তার আকাশও ছিল না। আবরণ করে এমন কি ছিল? কোথায় কাহার স্থান ছিল? দূর্গম ও গম্ভীর জল কি তখন ছিল?।। ১।।
  2. তখন মৃত্যুও ছিল না, অমরত্বও ছিল না, রাত্রি ও দিনের প্রভেদ ছিল না। কেবল সেই একমাত্র বস্তু বায়ুর সহকারিতা ব্যতিরেকে আত্মামাত্র অবলম্বনে নিশ্বাস প্রশ্বাস যুক্ত হয়ে জীবিত ছিলেন। তিনি ব্যতীত আর কিছুই ছিল না।। ২।।

প্রকৃতি ও পুরুষের সংযোগ

সাংখ্য দর্শনের বর্ণনায় প্রকৃতি ও পুরুষের সংযোগে ক্রমাণ্বয়ে ব্যাক্ত জগৎ সৃষ্টির হতে থাকে। প্রকৃতি ও পুরুষের উভয়ের সংযোগে প্রথম যে তত্ত্বের উৎপন্ন হয় তার নাম মহাত্তত্ত্ব বা বুদ্ধিতত্ত্ব। বর্ণনা অনুসারে ব্রহ্মই সেই প্রকৃতি-পুরুষের সংযোগকারী।

নাসদীয় সুক্তে আরও বলা আছে,

সর্বপ্রথমে অন্ধকারের দ্বারা অন্ধকার আবৃত ছিল। সর্বত্রই চিহ্ন বর্জিত ও চতুর্দিক জলময় ছিল। অবিদ্যমান বস্তু দ্বারা সেই সর্বব্যাপী আচ্ছন্ন ছিলেন। তপের প্রভাবে সেই এক বস্তু জন্মিলেন।

মহত্যাদির সৃষ্টি

এই মহৎ তত্ত্ব হতে ত্রিগুণাত্বক অহঙ্কারতত্ত্ব অর্থাৎ সাত্ত্বিক, রাজসিক ও তামসিক গুণসম্পন্ন অহংকারের উৎপত্তি হয়।

অহংকার হতে সত্ত্বগুণের প্রাবল্যে পঞ্চজ্ঞানেন্দ্রিয় (চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা, ত্বক) পঞ্চকর্মেন্দ্রিয় (হস্ত, পদ, বাক, পায়ু, উপস্থ), এবং উভয়েন্দ্রিয় (মন) মিলে মোট একাদশ ইন্দ্রিয়ের উৎপত্তি হয়। তমগুণের প্রাবল্যে পঞ্চতন্মাত্র (শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস, গন্ধ) ‍উৎপন্ন হয়। আবার এই পঞ্চতন্মাত্র হতে ব্রহ্মই যথাক্রমে পঞ্চ স্থুলভূত (আকাশ, বায়ু, অগ্নি, অপ বা জল ও পৃথিবী) সৃষ্টি করেছেন।

পঞ্চতন্মাত্র হতে পঞ্চস্থুলভূতের সৃষ্টি

পঞ্চতন্মাত্র হতে পঞ্চস্থুলভূতের সৃষ্টি। শব্দতন্মাত্র হতে আকাশ; শব্দ ও স্পর্শ তন্মাত্র হতে বায়ু; শব্দ, স্পর্শ ও রূপতন্মাত্র হতে তেজ; শব্দ, স্পর্শ, রূপ ও রসতন্মাত্র হতে জল সৃষ্টি হয়। পরব্রহ্মই সেই জলকে ধারণ করলেন। এরপর তিনিই সেই জলে জগৎ বীজরূপ ইচ্ছাশক্তি স্থাপন করলেন। এই বীজ ক্রমে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে সুবর্ণময় এক অণ্ডে পরিণত হয়। একে পবিত্র বেদে হিরণ্যগর্ভ বা ব্রহ্মাণ্ড এবং আদিতে ছিলেন বলে তাকে আদিত্য বলা হয়েছে। সেই সূবর্ণময় অণ্ড বিশাল জলরাশিকে নিজগর্ভমধ্যস্থ করল। সেখানে পরব্রহ্মই অবস্থান করলেন এবং তিনি ব্রহ্মা নামে পরিচিত হলেন। সৃষ্টির কারণরূপ সেই জলকে 'নারা' বলা হয়েছে। এই “নারা“-জলসমূহে প্রথম অয়ন বা আশ্রয় ছিল বলে ব্রহ্মাকে নারায়ণও বলা হয়ে থাকে।

এই অণ্ড ক্রমাণ্বয়ে জল, বহ্নি বা অগ্নি, বায়ু ও আকাশ দ্বারা ক্রমে আবৃত হল। এরপর শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস ও গন্ধতন্মাত্র হতে ত্রিগুণাত্বক পৃ্থিবীর উপাদান উৎপন্ন হল।

অণ্ডের বিভাজন

ব্রহ্মা সংবৎসরকাল পর অণ্ডকে ভাগ করে উর্ধ্বভাগ সৃষ্টি শক্তিরূপ ব্রহ্মা, মধ্যভাগ স্থিতিশক্তিরূপ বিষ্ণু, এবং অধোভাগে ধ্বংশ শক্তি বা প্রলয় শক্তিরূপ শিব প্রকটিত হল। মনুসংহিতায় বলা হয়েছে উর্ধখণ্ডে স্বর্গলোক, নিম্নখণ্ডে ভূলোক এবং মধ্যভাগে আকাশ, অষ্টদিক ও শাশ্বত জলস্থান সৃষ্টি হয়েছে। অণ্ড ভাগের সময় একপ্রকার তরঙ্গ রশ্মির উদ্ভব হয়। এরপর ব্রহ্ম বিন্দু থেকে সবকিছু গতিময় বা ব্যাপ্ত হয়, অব্যাক্ত হতে সমস্তকিছু ব্যাক্ত হতে থাকে, সৃষ্টি হয় বিভিন্ন গ্রহ, নক্ষত্র ও জগতের।

সৃষ্টির বিস্তার

বিভিন্ন গ্রন্থে ব্রহ্মাকে প্রথম জন্মগ্রহণকারী ও গৌণ স্রষ্টা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁর শুরুর সময়কে কল্প হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বিবরণে বলা হয়েছে, মহাবিশ্বকে প্রথমে তিনি তিন ও পরে চৌদ্দ লোকে ভাগ করেন এবং মহাবিশ্বকে গুণ ও পূর্ণ করার জন্য প্রথম জীবিতসত্তা সৃষ্টি করেন। বিবরণে বলা হয়েছে, ব্রহ্মা তমসাচ্ছন্ন পৃথিবীকে চন্দ্র, সূর্য ও নক্ষত্রমন্ডলী দ্বারা আলোকিত করেন। সৃষ্টি-বিস্তারের জন্য প্রথমে তিনি ঋষিগণ সৃষ্টি করেন, কিন্তু এরা বংশবিস্তারে অনাগ্রহী হয়ে তপস্যায় মগ্ন হয়। এতে ব্রহ্মা নিজ মূর্তি থেকে "শতরূপা ও স্বয়ম্ভুব মনু" নামক নারী ও পুরুষ সৃষ্টি করেন। এদের প্রিয়ব্রত ও উত্তানপাদ নামক দুই পুত্র এবং আকুতি, দেবাহুতি ও প্রসূতি নামে তিন কন্যার জন্ম হয়। এভাবে পৃথিবীতে মানুষের বংশ বিস্তার শুরু হয়।

লোক বা জগৎ

হিন্দুধর্মে চোদ্দটি লোক বা জগতের কথা বলা হয়েছে – ৭টি ঊর্ধ্বলোক এবং ৭টি নিম্নলোক (পৃথিবী রয়েছে ঊর্ধ্বলোকগুলোর সবচেয়ে নিচে)। ঊর্ধ্বলোকগুলো হল – ভূ (ভূমি), ভূবঃ (বায়ু), স্ব (স্বর্গ), মহঃ, জন, তপ ও সত্য। সত্যলোকে ব্রহ্মার বাস, মহঃ লোকে ঋষিগণের বাস এবং স্বর্গে বাস দেবতাদের। নিম্নলোকগুলো হল – অতল, বিতল, সুতল, রসাতল, তলাতল, মহাতল ও পাতাল।

প্রতিটি লোকই হল (পৃথিবী বাদে) মৃত্যুর পর আত্মার অস্থায়ী বাসস্থান। পৃথিবীতে জীবের মৃত্যুর পর ধর্মরাজ যম জীবের সমস্ত পাপ-পুণ্যের বিচার করে তাকে ঊর্ধ্ব কিংবা নিম্নলোকে পাঠান। ধর্মের কিছু শাখায় বলা আছে, পাপ ও পুণ্য পরস্পরকে প্রশমিত করতে পারে, তাই পরবর্তী জন্ম স্বর্গ বা পাতালে হতেই পারে। আবার কোথাও বলা হয়েছে, পাপ ও পুণ্য একে অপরকে প্রভাবিত করতে পারে না। এই ক্ষেত্রে আত্মা উপযুক্ত লোকটিতে জন্ম নেয়। তারপর ওই লোকে আত্মার জীবনকাল শেষ হলে তা পুনরায় পৃথিবীতে ফিরে আসে (পৃথিবীর কোনো এক জীব রূপে জন্ম নেয়)। বলা হয়, একমাত্র পৃথিবীতে মানুষ হিসেবে জন্মগ্রহণ করলেই আত্মার মোক্ষলাভ বা পরমধামে যাত্রা হতে পারে, যে স্থান জন্ম-মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্ত, যেখানে রয়েছে স্বর্গীয় পরমানন্দ।

সৃষ্টিকাল গণনা

হিন্দু ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী, মহাজগৎ অনন্তকাল ধরে সময়চক্রে গতিশীল। এই চক্রের প্রারম্ভিক বিভাগটি হল কল্প বা "ব্রহ্মার এক দিন", যা ৪৩২ কোটি বছরের সমান। ব্রহ্মার এক রাতের পরিসরও একই। এমন ৩৬০ ব্রাহ্ম দিন-রাত বা অহোরাত্র মিলে তৈরী হয় এক ব্রাহ্ম বৎসর যার পরিমাণ ৩,১১০,৪০ কোটি মানব বছর বা সৌর বছর, যেখানে ব্রহ্মার জীবনকাল ১০০ ব্রাহ্ম-বৎসর, একে এক পরযুগ বলা হয়। অর্থাৎ সর্ববৃহৎ সময়চক্রটি ৩১,১০৪,০০০ কোটি মানব বছর বা সৌর বছরের সমান। এই সময়কাল অতিবাহিত হলে গোটা ব্রহ্মাণ্ড পরমাত্মা বা পরব্রহ্মে বিলীন হয়, যতক্ষণ না নতুন সৃষ্টির উদ্ভব ঘটে। প্রতি ব্রাহ্ম দিনে ব্রহ্মা মহাজগৎ সৃষ্টি করেন এবং ব্রাহ্ম রাত্রে এটিকে ধ্বংস করেন। প্রতি ব্রাহ্ম রাতে নিদ্রিত ব্রহ্মার শরীরে সমাহিত হয় ব্রহ্মাণ্ড। প্রতিটি কল্প ১৪ উপকল্প বা মন্বন্তর (মনু+অন্তর) এবং এক সত্য যুগ পরিমাণ সময়ে বিভক্ত, যার প্রতিটির পরিসর ৩০,৮৪,৪৮,০০০ বছর। দুটি মন্বন্তরের মাঝে এক বিরাট শূন্যস্থান থাকে। এই সময় বিশ্বে পুনর্জন্ম হয় এবং এক নতুন মনুর উদ্ভব হয়, যিনি মনুষ্যজাতির জনক ও রক্ষক। বর্তমানে আমরা এই কল্পের সপ্তম মন্বন্তরে রয়েছি, বর্তমান মনুর নাম বৈবস্বত মনু। প্রত্যেকটি মন্বন্তর আবার ৭১ মহাযুগ বা চতুর্যুগ এবং এক সত্য যুগ সমন্বিত। ১০০০ মহাযুগে এক কল্প। প্রতিটি মহাযুগ ৪ যুগ নিয়ে গঠিত–সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলি। এদের সময়কাল যথাক্রমে ৪৮০০, ৩৬০০, ২৪০০ ও ১২০০ দৈব বৎসর।

আরও দেখুন

  • মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব
  • নাসদীয় সূক্ত
  • পুরুষসূক্ত

তথ্যসূত্র

গ্রন্থপঞ্জি

  • Martin Haug|Haug, Martin (1863). The Aitareya Brahmanam of the Rigveda, Containing the Earliest Speculations of the Brahmans on the Meaning of the Sacrificial Prayers. আইএসবিএন ০-৪০৪-৫৭৮৪৮-৯.
  • Joseph, George G. (2000). The Crest of the Peacock: Non-European Roots of Mathematics, 2nd edition. Penguin Books, London. আইএসবিএন ০-৬৯১-০০৬৫৯-৮.
  • Subhash Kak|Kak, Subhash C. (2000). 'Birth and Early Development of Indian Astronomy'. In Selin, Helaine (2000). Astronomy Across Cultures: The History of Non-Western Astronomy (303-340). Boston: Kluwer. আইএসবিএন ০-৭৯২৩-৬৩৬৩-৯.
  • Teresi, Dick (2002). Lost Discoveries: The Ancient Roots of Modern Science - from the Babylonians to the Maya. Simon & Schuster, New York. আইএসবিএন ০-৬৮৪-৮৩৭১৮-৮.

আরও পড়ুন

  • Date Panchang — An Indian calendar published from Solapur city in Marathi language.

বহিঃসংযোগ

  • Ancient Hindu Astronomy
  • The Àryabhatiya of Àryabhata: The oldest exact astronomical constant?
  • Bhagavad Gita, Chapter 8 verse 17

Text submitted to CC-BY-SA license. Source: সৃষ্টিচক্র (হিন্দু দর্শন) by Wikipedia (Historical)