Aller au contenu principal

ইসলামি নারীবাদ


ইসলামি নারীবাদ


২০০২ সালে মারগট বাদরান অনুসারে, ইসলাম ও নারীবাদের একটি সমন্বয়কে "ইসলামি দৃষ্টান্তে একটি নারীবাদী আলোচনা ও চর্চা" হিসেবে ধরা হয়। ইসলামি নারীবাদীগণ ইসলাম ও ইসলামের শিক্ষা থেকে তাঁদের মত প্রকাশ করেন, ব্যক্তিগত ও পাবলিক ক্ষেত্রসমূহে নারী ও পুরুষের পূর্ণাঙ্গ সাম্য দাবি করেন, এবং এই আলোচনা ও বিতর্কগুলোতে অমুসলিমদেরকে নিয়ে আসেন। ইসলামি আলেমদের মতে ইসলামি নারীবাদ ধর্মনিরপেক্ষ নারীবাদের তুলনায় অধিক মৌলবাদী (radical) এবং কুরআন এবং এর কেন্দ্রীয় পাঠ নিয়ে ইসলামের আলোচনার মধ্যেই এটি অবস্থান করে। মরক্কোর সমাজবিজ্ঞানী "ফাতেমা মারনিসি এবং আমিনা ওয়াদুদ ও লেইলা আহমেদ এর মতো শিক্ষায়তনিকগণ" ইসলামি নারীবাদকে একটি "স্কুল অফ থট" বা দার্শনিক ঘরানা হিসেবে প্রকাশ করেন।

ইসলামি নারীবাদ ধারণার পক্ষের লোকেরা বলেন, মুসলিম-প্রধান রাষ্ট্রগুলো থেকে অনেক সময়ই নারী রাষ্ট্রপ্রধান, প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রের সচিবগণ এসেছেন, যেমন আজারবাইজানের লালা শেভকেত, পাকিস্তানের বেনজীর ভুট্টো, সেনেগালের মামে মাদিওর বয়ে, তুরস্কের তানসু চিলের, কসভোর কাকুশা জাশারি, ইন্দোনেশিয়ার মেঘবতী সুকর্ণপুত্রী এবং বাংলাদেশে খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা। ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বারা তিনি প্রতিস্থাপিত হন, যিনি বাংলাদেশে সর্বাধিক সময় ধরে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।

সংজ্ঞা

"ইসলামি নারীবাদী" এবং "ইসলামবাদী" শব্দ দুটির মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে। নারী ও পুরুষ সকলের ক্ষেত্রেই এই শব্দদুটো প্রযোজ্য হতে পারে।

"ইসলামি নারীবাদী"

ইসলামু নারীবাদীগণ ধর্মীয় গ্রন্থসমূহকে নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যাখ্যা করেন। তাঁরা ইসলাম ও ইসলামের শিক্ষা থেকে তাঁদের মত প্রকাশ করেন, ব্যক্তিগত ও পাবলিক ক্ষেত্রসমূহে নারী ও পুরুষের পূর্ণাঙ্গ সাম্য দাবি করেন এবং এই আলোচনা ও বিতর্কগুলোতে অমুসলিমদেরকে নিয়ে আসেন।

ইসলামি আলেমদের মতে ইসলামি নারীবাদ ধর্মনিরপেক্ষ নারীবাদের তুলনায় অধিক মৌলিক বা মৌলবাদী এবং কুরআন এবং এর কেন্দ্রীয় পাঠ নিয়ে ইসলামের আলোচনার মধ্যেই এটি অবস্থান করে।

সাম্প্রতিক সময়ে সমাজের বিভিন্ন দিক থেকে ইসলামি দলগুলোর সমর্থনের লাভের উদ্দেশ্যে ইসলামি নারীবাদের ধারণা আরও সম্প্রসারিত হয়েছে। এছাড়াও শিক্ষিত মুসলিম নারীগণ সমাজে তাদের ভূমিকাকে শক্তিশালী করার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে।

"ইসলামবাদী"

ইসলামবাদীগণ রাজনৈতিক ইসলামকে সমর্থন করেন। এই রাজনৈতিক ইসলাম হচ্ছে কুরআন এবং হাদিস থেকে আসা খিলাফত বা ইসলামি সরকার ব্যবস্থার ধারণা। কোনো কোনো ইসলামবাদী জনসাধারণের ক্ষেত্রে বা রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বিষয়সমূহে (লোকজীবনে) নারী অধিকারের পক্ষে থাকেন, কিন্তু ব্যক্তিগত ও ব্যক্তিমালিকানাধীন ক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে কিছু বলেন না। সুদানীয় আলেম এবং ইসলামি রাজনীতিবিদ সুয়াদ আল-ফাতিহ আল-বাদাওয়ি বলেন, নারীবাদ তাকওয়ার (ধর্মনিষ্ঠা বিষয়ক ইসলামি ধারণা) সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, এবং তাই ইসলাম ও নারীবাদ একে অপরের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা (অর্থাৎ, একটি গ্রহণ করলে আরেকটিকে বর্জন করতে হবে)। জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর মুসলিম-খ্রিশ্চিয়ান আনডারস্ট্যান্ডিং-এর মারগট বাদরান বলেন, ইসলাম ও নারীবাদ সম্পূর্ণভাবে আলাদা বা বিচ্ছিন্ন নয়, এবং "ইসলামি নারীবাদ কুরআনের শিক্ষা ও নিয়ম থেকেই আসে"। এটি নারী এবং পুরুষের জন্য অধিকার ও ন্যায় ও তাদের অস্তিত্বের পূর্ণতা দাবি করে। ইসলামি নারীবাদ যেরকম উচ্চমাত্রায় বিতর্কিত বিষয়, তেমনি দৃঢ়ভাবে গৃহীত বিষয়ও বটে।"

ইতিহাস

ইসলামের অধীনে প্রাথমিক পরিবর্তন

খ্রিস্টীয় ৭ম শতকে ইসলামের প্রথম দিকে নারী অধিকারের পরিবর্তনসমূহ বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ এবং উত্তরাধিকারপ্রাপ্তিতে প্রভাব ফেলেছিলো। অক্সফোর্ড ডিকশনারি অফ ইসলাম অনুসারে, সেইসময় আরব সমাজগুলোতে কন্যা শিশুহত্যার নিষেধাজ্ঞার ফলে সাধারণভাবে নারীর অবস্থার উন্নতি হয়েছিল, যদিও কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মতে ইসলামের পূর্বে ও পরে উভয়ক্ষেত্রেই শিশুহত্যার চর্চা ছিল।

ইসলামী আইন অনুসারে, বিবাহকে আর অবস্থা নয়, চুক্তি হিসেবে দেখা হয়, যেখানে নারীর সম্মতি (সক্রিয় সম্মতি বা মৌন সম্মতি) বাধ্যতামূলক ছিলো। পূর্বে কন্যার পিতাকে বধূমূল্য হিসেবে যৌতুক দিতে হতো, ইসলামি আইন অনুসারে বৈবাহিক উপহার হিসেবে যৌতুক প্রদান করা হয় যা স্ত্রী তার ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে অধিকার করতে পারে।।

উইলিয়াম মন্টগোমারি ওয়াট বলেন, মুহাম্মাদ তাঁর সময়ে ও তাঁর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে নারী অধিকার রক্ষায় কাজ করেছিলেন এবং নারী সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ের উন্নয়ন করেছিলেন - এমনটা বলা যেতে পারে। ওয়াট ব্যাখ্যা করেন, "ইসলাম যে সময়ে শুরু হয়েছিল, নারীদের অবস্থা ভয়াবহ ছিলো - তাঁদের সম্পত্তির অধিকার ছিলো না, তাঁদেরকে পুরুষের সম্পত্তি হিসেবে দেখা হতো, আর যদি কোনো পুরুষের মৃত্যু হতো তাঁর সকল সম্পত্তি তাঁর পুত্রদের কাছে চলে যেতো।" মুহাম্মাদ "নারীদেরকে সম্পদ অধিকার, উত্তরাধিকার, শিক্ষা ও বিবাহবিচ্ছেদের অধিকার দান করে তাদেরকে মৌলিক নিরাপত্তা প্রদান করেন।" হাদ্দাদ এবং এসপোসিতো বলেন, "মুহম্মদ পারিবারিক জীবন, বিবাহ, শিক্ষা, এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নারী অধিকার ও বিভিন্ন সুবিধাদির সুযোগ করে দিয়ে সমাজে নারীর অবস্থার উন্নয়ন করতে সাহায্য করেন"।

ইসলাম নারীদের অবস্থার উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন করেছেন এই ধারণার নারীবাদী সমালোচনাও রয়েছে। লেইলা আহমেদ বলেন, ইসলামের ইতিহাস থেকে দেখা যায়, অন্তত কিছু নারী ইসলাম-পূর্ব যুগে সম্পদের উত্তরাধিকারী হতেন, ব্যবসা পরিচালনা করতেন, নিজেদের স্বামী পছন্দ করে নিতেন, এবং সম্মানজনক পেশায় নিযুক্ত হতেন। ফাতিমা মারনিসি একইভাবে যুক্তি দেখান, ইসলাম-পূর্ব যুগের রীতি নীতি নারীদের যৌনতা এবং নারীদের সামাজিক স্বাধীনতার ক্ষেত্রে কম নয়, বরং অধিক মাত্রায় উদার ছিল।

মাহুদ এ, মোয়েল জে, হাডসন সি, এবং লেদারস এল. নারীদের নিয়ে একটি গবেষণা পরিচালনা করেন যেখানে নমুনা ব্যক্তিবর্গকে তাদের নিজেদের ধর্মে নারী হিসেবে তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করা হয় এবং প্রশ্ন করা হয় যে এই ভূমিকা তাদের ক্ষমতায়ন করে কিনা। একজন উত্তরদাতা বলেন, "ইসলাম এবং তার শিক্ষা সমাজে নারীকে পুরুষের সমান অধিকার দিতে পারে, এবং ব্যক্তিমালিকানাধীক ক্ষেত্রে ইসলাম নারীকে বঞ্চিত করে না। আমি বাস্তবিকই মনে করি, কিছু মুসলিম ইসলামের শিক্ষাকে বিকৃত করেছে এবং আমাদের সংস্কৃতিকে ভুলে গেছে। আমি মনে করি ইসলামকে নারীর ক্ষমতায়নের উৎস হিসেবে ব্যবহার করা যায়।"

ইসলামি স্বর্ণযুগে

যেখানে প্রাক-আধুনিক যুগে আনুষ্ঠানিক নারীবাদী আন্দোলনের অভাব ছিল, সেখানে ইসলামি স্বর্ণযুগের সময় কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নারী অধিকার ও স্বাধীনতার উন্নয়নের কথা বলেছিলেন। এই লোকদের মধ্যে মধ্যযুগের রহস্যবাদী এবং দার্শনিক ইবনে আরাবী রয়েছেন, যিনি বলেন পুরুষের মতো নারীরাও আধ্যাত্মিক অবস্থা অর্জন করতে পারে। পরবর্তী যুগে অষ্টাদশ শতকের সংস্কারক উসমান ড্যান ফোডিও এর কন্যা নানা আসমাউ মুসলিম নারীর সাক্ষরতা এবং শিক্ষার জন্য কাজ করেন।

শিক্ষা

সম্পদশালী সম্ভ্রান্ত নারীগণ প্রায়ই ইসলাম ধর্মীয় এবং ইসলাম শিক্ষার প্রতিষ্ঠানের জন্য অর্থ দান করতো, যদিও বিংশ শতকের পূর্বে এগুলোর মধ্যে খুব কম প্রতিষ্ঠানেই নারী শিক্ষার্থী ভর্তি হতো। যেমন, ফাতিমা আল-ফিহরি ৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে আল-কারাওইন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন, কিন্তু ১৯০০ এর শতকেই এই বিশ্ববিদ্যালয় নারী শিক্ষার্থীদের ভর্তি করা শুরু করে (যাদের মধ্যে ফাতিমা আল-কাব্বাজ উল্লেখযোগ্য)। দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ শতকের আইয়ুবীয় রাজবংশের বেলায়ও এটা দেখা যায়: দামেস্কোতে ১৬০টি মসজিদ ও মাদ্রাসা তৈরি করা হয়, এর মধ্যে নারীগণ ২৬টিতে ওয়াকফ ব্যবস্থায় (দাতব্য ট্রাস্ট বা ট্রাস্ট আইন) অর্থ দান করেছিলেন। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকদের অর্ধেকই ছিল নারী।

দ্বাদশ শতকের সুন্নি আলেম ইবনে আসাকির এর মতে, নারী শিক্ষার সুযোগ ছিল। তিনি বলেন বালিকা ও নারীরা শিক্ষাগ্রহণ করে ইজাযাহ্‌ (প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রী) গ্রহণ করতে পারতেন এবং উলামা ও "শিক্ষিকা" হতে পারতেন। এটি বিশেষ করে শিক্ষিত এবং পাণ্ডিত্যপূর্ণ পরিবারেই দেখা যেত, যেখানে পুত্র ও কন্যা উভয়ের জন্যই সর্বোচ্চ সাম্ভাব্য শিক্ষা নিশ্চিত করা হতো। ইবনে আসাকির নিজেই ৮০ জন ভিন্ন ভিন্ন নারী শিক্ষিকার কাছে পড়াশুনা করেছেন। মুহাম্মাদ মদিনায় নারীদেরকে ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি আগ্রহীদের জন্য প্রশংসা করেছিলেন: "আনসার নারীরা কতই চমৎকার; লজ্জা তাদেরকে ধর্মশিক্ষায় শিক্ষিত হতে আটকাতে পারেনি।"

নারীদের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে শ্রেণীকক্ষে গিয়ে শিক্ষাগ্রহণ করা খুব বিরল ছিলো। তাঁরা অনানুষ্ঠানিক বক্তৃতা এবং মসজিদ, মাদ্রাসা ও অন্যান্য রাষ্ট্রমালিকানাধীন ক্ষেত্রের শিক্ষা অধিবেশনে অংশগ্রহণ করতেন। কোনো কোনো পুরুষ এই চর্চাকে অনুমোদন করতেন না, যেমন মুহাম্মাদ ইবনে আল-হাজ (মৃত্যু ১৩৩৬ খ্রিষ্টাব্দ) সেই সময়ে নারীদের এই আচরণ ও এরকম অনানুষ্ঠানিত শিক্ষাগ্রহণের উপর বিতৃষ্ণ ছিলেন।

মধ্যযুগে নারীর প্রসঙ্গে আব্দুল হাকিম মুরাদ লেখেন:

[ভাবুন,] একজন শায়খের কাছ থেকে ধর্মগ্রন্থ [এর আবৃত্তি] শোনার সময় সকলে যখন একত্রিত হয় তখন নারীগণ কী করে। সেখানে নারীরাও ধর্মগ্রন্থের বাণী শোনার জন্য একত্রিত হয়। পুরুষেরা একদিকে বসে থাকে, নারীরা তাদের মুখোমুখি বসে। কখনও কখনও এও দেখা যায় যে, কোনো নারী দাঁড়ালো, আবার বসে পড়ল, আবার উচ্চস্বরে আওয়াজ করল। এছাড়া তার আওরা সকলের সামনে চলে আসে। যেখানে নিজেদের গৃহেই নারীদের এরকম প্রকাশ নিষিদ্ধ, সেখানে মসজিদে পুরুষের সামনে এরকম আচরণ কীভাবে অনুমোদিত হতে পারে?

এখানে, 'আওরাহ্‌' বলতে নারীর শরীরের সেই অংশগুলোকে বোঝানো হয় যাকে ইসলাম অনুসারে ঢেকে রাখা উচিৎ।

মধ্যযুগে নারীর প্রসঙ্গে আব্দুল হাকিম মুরাদ লেখেন:

প্রাচ্যবাদী ইগনাজ গোল্ডজিহার দেখিয়েছেন যে, মধ্যযুগীয় হাদিস পণ্ডিতদের মধ্যে সম্ভবত পনেরো শতাংশ ছিল নারী, তাঁরা মসজিদে শিক্ষাদান করতেন এবং নিষ্ঠার ও নৈতিকতার জন্য তারা সর্বজনীনভাবে তারা প্রশংসিত ছিলেন। কায়রোতে সাকলাতুনিয়া মাদ্রাসার মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পূর্ণাঙ্গভাবে নারীর দ্বারা অর্থায়ন হতো, এবং কেবল নারীরাই সেগুলোতে পড়াতেন ও কাজ করতেন।

পঞ্চদশ শতাব্দীতে, আল-সাখাভী তাঁর সমগ্র ১২ খন্ডের জীবনী-সংক্রান্ত অভিধান দাও আল-লামি নামক গ্রন্থটিকে নারী পণ্ডিতদেরকে উৎসর্গ করেন, সেই গ্রন্থে ১,০৭৫ জন নারী পণ্ডিতের কথা উল্লেখ করা হয়।

১৯৯৫ সালে যখন তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসে, তখন নারীর শিক্ষা নিষিদ্ধ হয় এবং তা তলানিতে চলে যায়। তালেবানকে উৎখাত করা হলে পুনরায় নারীশিক্ষার পুনরুজ্জীবিত হবার সুযোগ তৈরি হয়, তবে অবশিষ্ট কুসংস্কার এবং সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় পুরুষের হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত থাকার কারণে তা কঠিন হয়ে যায়। আগস্ট ২০১২-তে, ইরানের একটি সরকারি সূত্র একটি সংবাদ প্রকাশ করে যে, ৩৬টি ইরানি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৭টি কারিগরি, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে স্নাতকোত্তর কোর্সে অংশ নেওয়ার জন্য নারীদের উপর সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হবে।

নাগরিক ও সামরিক পেশা

খিলাফতের সময় বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও ধর্মীয় পটভূমি থেকে শ্রমশক্তি এসেছে, সেই সময়ে পুরুষ ও নারী উভয়ই বিভিন্ন পেশা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল। সেইসময় নারীরা প্রাথমিক সেক্টর (উদাহরণস্বরূপ কৃষক হিসাবে), মাধ্যমিক সেক্টর (নির্মাণ শ্রমিক, বস্ত্রশিল্পে রং দেয়া ও চড়কার কাজ ইত্যাদি) এবং টারশিয়ারি সেক্টরের (বিনিয়োগকারী, চিকিৎসক, সেবিকা, গিল্ড এর প্রধান, দালাল, পাইকার, ঋণদাতা, পণ্ডিত ইত্যাদি) বিস্তৃত পরিসরের বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড ও বৈচিত্র্যময় পেশায় জড়িত ছিলো। মুসলিম নারী সেই সময়কার বস্ত্রশিল্পের কিছু শাখা যেমন স্পিনিং, ডায়িং ও এমব্রয়ডারিতে একচেটিয়া ছিল। সেই সময় বস্ত্রশিল্প ছিল সর্ববৃহৎ এবং সবচেয়ে বেশি বিশেষায়িত ও বাজারমুখী শিল্প।

দ্বাদশ শতাব্দীতে, বিখ্যাত ইসলামি দার্শনিক এবং কাজি (বিচারক) ইবনে রুশদ দাবি করেন যে, নারী সকল ক্ষেত্রে পুরুষের সমান এবং শান্তি ও যুদ্ধ উভয় ক্ষেত্রেই তারা উন্নতি করবার সমান ক্ষমতা রাখে। এক্ষেত্রে নিজের বক্তব্যের সমর্থনে তিনি আরব, গ্রিক ও আফ্রিকান যোদ্ধাদের উদাহরণ দেন। মুসলিম ইতিহাসের প্রথম দিকে, মুসলিম বিজয় ও ফিতনায় (বেসামরিক যুদ্ধ) সৈন্য বা সেনাধ্যক্ষ হিসাবে কাজ করেছে এরকম উল্লেখযোগ্য নারীর উদাহরণ হচ্ছে নুসাইবাহ্‌ বিনতে ক্বাব আল মাজিনিয়াহ, আয়েশা, খাওলাহ্‌ এবং ওয়াফেইরা।

সম্পত্তি, বিবাহ ও অন্যান্য অধিকার

ইসলামী আইনের অধীনে নারীর উত্তরাধিকার হওয়া ও উত্তরাধিকার প্রদানের; স্বাধীনভাবে তাদের আর্থিক বিষয় পরিচালনার; এবং চুক্তির দ্বারা বিবাহ এবং বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষমতা রয়েছে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এর আইনের প্রফেসর নোয়া ফেল্ডম্যান লিখেছেন:

লিঙ্গবাদ এর জন্য সাধারণ আইন এর ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময়ের জন্য বিবাহিত নারীদের মধ্যে সম্পত্তির অধিকার ছিল না, এবং তাদের স্বামী ব্যতীত তাদের আইনগত ব্যক্তিত্বও ছিল না। ঔপনিবেশিক আমলে যখন ব্রিটিশরা তাদের উপনিবেশগুলোতে মুসলিমদের ক্ষেত্রে শরিয়তের পরিবর্তে তাদের আইন প্রয়োগ করে, তখন মুসলিম বিবাহিত নারীরা তাঁদের সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় যা তারা ইসলামি আইনে সবসময় লাভ করতো।

১৫ শতক থেকে আধুনিক যুগের পূর্ব পর্যন্ত সময়ে পশ্চিমা বিশ্বে যেখানে বিবাহ বিচ্ছেদ খুব অস্বাভাবিক ছিলো, সেসময় মুসলিম বিশ্বে বিবাহ বিচ্ছেদ (তালাক) এর হার তুলনামূলকভাবে সাধারণ ঘটনা ছিলো। অন্তত একটি গবেষণা অনুযায়ী মামলুক সালতানাত এবং অটোমান সাম্রাজ্যে প্রথম দিকে বিবাহ বিচ্ছেদের হার বর্তমান মধ্যপ্রাচ্যের তুলনায় বেশি ছিলো। ১৫ শতকের মিশরে আল-সাখাভী ৫০০ জন নারীর বৈবাহিক ইতিহাস নথিবদ্ধ করেছিলেন, যা মধ্যযুগের বিবাহের সবচেয়ে বড় নমুনা। সেখান থেকে দেখা যায়, মিশর ও সিরিয়ার মামলুক সালতানাতের অন্তত এক তৃতীয়াংশ নারী একাধিক বিবাহ করেছিলেন, এবং অনেকে তিনবার বা তারও বেশি বিবাহ করেছিলেন।

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি

আরও দেখুন

আরও পড়ুন

  • Ahmed, Leila (১৯৯২)। Women and gender in Islam: historical roots of a modern debate। New Haven, Connecticut: Yale University Press। আইএসবিএন 9780300049428। 
  • Ali, Kecia (২০১৪), "Feminist thought in Islam", Fitzpatrick, Coeli; Hani Walker, Adam, Muhammad in history, thought, and culture: an encyclopedia of the Prophet of God, Santa Barbara, California: ABC-CLIO, LLC, পৃষ্ঠা 195–197, আইএসবিএন 9781610691789. উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
  • Anwar, Zainah (মে ১৭, ২০০৩)। "Islamisation and its Impact on Democratic Governance and Women's Rights in Islam: A Feminist Perspective"। islam-democracy.org। Center for the Study of Islam and Democracy। মার্চ ৮, ২০০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  • Badran, Margot (২০০১)। Feminists, Islam, and Nation: Gender and the Making of Modern Egypt। Princeton: Princeton University Press। আইএসবিএন 9781400821433। 
  • Badran, Margot। "Islamic feminism: what's in a name? Islamic feminism is on the whole more radical than Muslims' secular feminisms"। Al-Ahram Weekly Online  17–23 January 2002, Issue No.569.
  • Noushad, Mohammed (জানুয়ারি ১৬, ২০০৪)। "Islamic feminism means justice to women"। The Milli Gazette  Interview with Prof Margot Badran.
  • Baffoun, Alya (১৯৮২)। "Women and social change in the Muslim Arab world"। Women's Studies International Forum, special issue: Women and Islam। ScienceDirect। 5 (2): 227–242। ডিওআই:10.1016/0277-5395(82)90030-9. 
  • Baffoun, Alya (১৯৯৪), "Feminism and Muslim fundamentalism: the Tunisian and Algerian cases", Moghadam, Valentine M., Identity politics and women: cultural reassertions and feminisms in international perspective, Boulder: Westview Press, আইএসবিএন 9780813386928 উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
  • Baffoun, Alya (১৯৮৯)। African women participation for research and development: roles and functions of AAWORD। Tunis University।  n:7.
  • Baffoun, Alya (১৯৮০)। African women participation for research and development: roles and functions of AAWORD। Tunis University। 
  • Baffoun, Alya (১৯৮০), "Some remarks on Women and Development in the Maghreb", Rivlin, Helen Anne B., The changing Middle Eastern city, Binghamton: State University of New York, ওসিএলসি 251755375 উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
  • Baffoun, Alya (১৯৮৪), "Critical Methodological Approach to the problem of Sexual Asymmetry", UNESCO, Social science research and women in the Arab world, London Dover, NH Paris: F. Pinter, আইএসবিএন 9789231021404 উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
  • Djait, Badra (আগস্ট ২০০৬)। "More to life than window dressing"। জানুয়ারি ১১, ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।  In this special feature, a successful Belgian-Algerian Muslim woman recounts what it was like growing up immersed in two cultures with divergent views of women.
  • Fernea, Elizabeth Warnock (১৯৯৮)। In search of Islamic feminism: one woman's global journey। New York: Doubleday। আইএসবিএন 9780385488587। 
  • Women and Islam in Oxford Islamic Studies Online
  • Women's Islamic Initiative in Spirituality and Equity
  • Canadian Council of Muslim Women Several examples of closely argued essays for female equality, based on the Qur'an.
  • The Modern Muslimah Forum å
  • Farooq, Mohammad Omar। "Women Scholars of Islam: They Must Bloom Again"। ২০০৬-০৬-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  • Foreign Affairs Committee of the National Council of Resistance of Iran. Women, Islam, and Equality, an ebook
  • Jameelah, Maryam (জুলাই ১৩, ২০০৫)। "The feminist movement and the Muslim woman"। islam101.com। Islam 101। সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ১০, ২০১৯ 
  • Jeenah, Na'eem (২০০১)। "Towards an Islamic feminist hermeneutic"। Journal for Islamic Studies। Cape Town: Centre for Contemporary Islam। 21: 36–70। ডিওআই:10.4314/jis.v21i1.39954. 
  • Jeenah, Na'eem (জানুয়ারি–ফেব্রুয়ারি ২০০৬)। "The national liberation struggle and Islamic feminisms in South Africa"। Women's Studies International Forum। Elsevier। 29 (1): 27–41। ডিওআই:10.1016/j.wsif.2005.10.004. 
  • Khader, Serene J. (ডিসেম্বর ২০১৬)। "Do Muslim women need freedom? Traditionalist feminisms and transnational politics"। Politics & Gender। Cambridge Journals। 12 (4): 727–753। ডিওআই:10.1017/S1743923X16000441. 
  • Lamya' al Faruqi, Lois। "Islamic Traditions and the Feminist Movement: Confrontation or Cooperation?"। 
  • Muñoz, Gema Martín (২০১২)। "Feminism in the Arab World: The Silent Revolution"। Qantara.de 
  • Nomani, Asra (নভেম্বর ৬, ২০০৫)। "A Gender Jihad For Islam's Future"। Washington Post 
  • Perry, Eleanor H. (জুন ১, ১৯৯৩)। Opening the Gates: A Century of Arab Feminist Writing  Article for Domes
  • Safarian, Alexander (২০০৭)। "On the history of Turkish feminism"। Iran & the Caucasus। Brill। 11 (1): 141–152। জেস্টোর 25597322. 
  • "A Declaration of the Rights of Women in Islamic Societies", SecularIslam.com, undated
  • Seker, Nimet (২০১২)। "Islamic Feminism and Reformist Islam: Against the Politicisation of the Koran"। Qantara.de 
  • Shaikh, Shamima। "Articles by the South African Islamic feminist"। ২০০৬-০২-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।  Articles by a South African Islamic feminist
  • Simons, Marlise (ডিসেম্বর ৪, ২০০৫)। "Muslim women take charge of their faith"। The New York Times। আগস্ট ৫, ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  • Sutherland, Joan (এপ্রিল ৪, ২০০৬)। "The ideas interview: Phyllis Chesler"। The Guardian 
  • Webb, Gisela (২০০০)। Windows of faith: Muslim women scholar-activists in North America। Syracuse, New York: Syracuse University Press। আইএসবিএন 9780815628521। 

তথ্যসূত্র


Text submitted to CC-BY-SA license. Source: ইসলামি নারীবাদ by Wikipedia (Historical)