![সৈয়দ ফারুক রহমান সৈয়দ ফারুক রহমান](/modules/owlapps_apps/img/nopic.jpg)
লেফট্যানেন্ট কর্নেল দেওয়ান ইশরাতুল্লাহ সৈয়দ ফারুক রহমান (০৯ আগস্ট ১৯৪৬ - ২৮ জানুয়ারি ২০১০) ছিলেন একজন বাংলাদেশী সামরিক অফিসার যিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বাংলাদেশের স্থপতি ও প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিলেন। ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি তাকেসহ সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ, মহিউদ্দিন আহমেদ ও মোহাম্মদ বজলুল হুদাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। সৈয়দ ফারুক রহমান ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী খন্দকার আবদুর রশিদ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের প্রধান সংগঠক ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১ম বেঙ্গল ল্যান্সার্স রেজিমেন্টের ২য় আইসি ছিলেন। তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনকে উৎখাত করার জন্য একদল জুনিয়র সেনা কর্মকর্তার নেতৃত্ব দেন এবং খন্দকার মোশতাক আহমেদকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত করেন।
১৯৭৪ সালে সৈয়দ ফারুক রহমান ডেমরা, মুন্সিগঞ্জ জেলা, নারায়ণগঞ্জ জেলা এবং নরসিংদী জেলায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দায়িত্বে ছিলেন। দায়িত্ব পালনকালে শেখ মুজিবের কিছু কর্মকাণ্ড তাকে ক্ষুব্ধ করে তোলে।
১৯৭৫ সালে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে মেজর হন। মেজরের পদধারণ করে ফারুক একদল জুনিয়র অফিসারদের সংগঠন করেন যারা বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনে ক্ষুব্ধ ছিল। পরিকল্পনাকারীরা শেখ মুজিবকে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, একনায়ক হিসেবে শাসন এবং তার ভারতপন্থী ও সোভিয়েতপন্থী শাসনের অভিযোগে অভিযুক্ত করে সমালোচনা করে। সিনিয়র কেবিনেট মন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমেদের গোপন সমর্থনে ফারুক তিনি একটি সামরিক অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করেন ও তা পরিচালনা করে। উক্ত সামরিক অভ্যুত্থানে মুজিবের দুই কন্যা, শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ছাড়া মুজিব ও তার পরিবারের সকলে নিহত হন। হত্যাকাণ্ডের পরে তাৎক্ষণিকভাবে অফিসাররা খন্দকার মোশতাক আহমেদ কে বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে অধিষ্ঠিত করে।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে খন্দকার মোশতাক আহমেদ ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেন যার ফলে শেখ মুজিবের হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচারকার্যকে নিষিদ্ধ হয়। ফারুক লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে উন্নীত হন এবং মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে পাল্টা অভ্যুথানে নতুন সরকারের পতনের আগ পর্যন্ত ক্ষমতাবান অবস্থানে অধিষ্ঠিত থাকেন। আবার, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর মোশাররফের বিরুদ্ধে লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু তাহেরের নেতৃত্বে অভ্যুত্থান সংঘটিত হলে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসেন। জিয়া সৈয়দ ফারুক রহমান ও মুজিবের অন্যান্য হত্যাকারীদের সশস্ত্র বাহিনী ও কূটনৈতিক প্রতিনিধিদলের নানা পদে অধিষ্ঠিত করেন। ১৯৭৯ সালে জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের অধীনে জাতীয় সংসদ ইনডেমিনিটি অধ্যাদেশকে সংসদের একটি সরকারি আইনে রূপান্তরিত করে।
১৯৮০ এর দশকে ফারুক সেনাবাহিনী থেকে অপসৃত হন এবং অবসরে যান। ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর ফারুক বাংলাদেশ ফ্রিডম পার্টি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সক্রিয় রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি ১৯৮৬ সালে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তিনি ভারতের আসামের ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসামের সাথেও জড়িত ছিলেন।
১৯৯৬ সালে মুজিবের কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করলে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হন। তার দলের অধীনে ইনডেমিনিটি আইন নাকচ করা হয় এবং মুজিব ও তার পরিবারের হত্যাকাণ্ডের একটি মামলা আরম্ভ হয়। ১৯৯৬ সালের আগস্টে সৈয়দ ফারুক রহমানকে বাংলাদেশ পুলিশ গ্রেফতার করে। ১৯৯৮ সালে ঢাকা হাইকোর্ট সৈয়দ ফারুক রহমানকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রদান করে। ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের পর, বেগম খালেদা জিয়ার বিএনপি সরকারের সময় মুজিব হত্যা মামলার কার্যক্রম ধীর হয়ে পড়ে। ২০০৭ সালের অক্টোবরে সৈয়দ ফারুক রহমান বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে একটি আপিল দায়ের করে। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা আবার ক্ষমতায় গেলে আদালতে মামলা পুনরায় শুরু হয়। সৈয়দ ফারুক রহমানসহ অন্যদের প্রাণভিক্ষার আবেদন বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট প্রত্যাখ্যান করলে, ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি ফারুক ও মুজিব হত্যার অন্যান্য চক্রান্তকারীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
Owlapps.net - since 2012 - Les chouettes applications du hibou