সামাজিক উদারনীতিবাদ হচ্ছে একটি রাজনৈতিক মতবাদ যেটি বিশ্বাস করে যে ব্যক্তি-স্বাধীনতার একটি সামাজিক বিচার থাকা দরকার। প্রাচীন উদারনীতিবাদের মত সামাজিক উদারনীতিবাদ বাজার অর্থনীতির পক্ষে এবং নাগরিক-রাজনৈতিক স্বাধীনতা বাড়ানোর কথা বলে। তবে প্রাচীন উদারনীতিবাদের সঙ্গে এটির পার্থক্য আছে একজায়গায় সেটি হলো জনগণের অর্থনীতি, চিকিৎসা সেবা এবং শিক্ষার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। সামাজিক উদারনীতিবাদ নীতিতে জনগণের মঙ্গল সব মানুষকে ব্যক্তিগত স্বাধীনতা দেওয়ার মাধ্যমেই সূচিত হবে বলে মনে করা হয়। সামজিক উদারনীতিবাদের নীতি ২য় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে পুঁজিতান্ত্রিক দেশগুলোর প্রধান নীতি হয়ে ওঠে। সামাজিক উদারনীতিবাদী রাজনৈতিক দলগুলো সাধারণত মধ্যমপন্থী কিংবা মধ্য-বামপন্থী হয়। সামাজিক উদারনীতিবাদ মহামন্দা এর পরে আলোকিত হিসেবে দেখা দেয়।
উনিশ শতকের শেষের দিকে 'প্রাচীন উদারনীতিবাদ' এর নীতি দ্বারা ব্রিটেনের অর্থনীতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল, দারিদ্র্যতা বাড়ছিলো, বাড়ছিলো বেকারত্ব, শ্রমিকরা অশান্তিতে ভুগে আন্দোলন করা শুরু করছিল। এসকল জিনিশ দেখে বিভিন্ন রক্ষণশীল সমাজতত্ত্ববিদ 'উদারনীতিবাদ' এর বিরোধিতা করতে থাকেন। অনেক সমালোচকদের মধ্যে চার্লস ডিকেন্স, টমাস কার্লাইল এবং ম্যাথু এ্যার্নল্ডও ছিলেন।
জন স্টুয়ার্ট মিল ব্রিটেনে নতুন মতবাদের প্রচলন ঘটান, অর্থনীতি, সমাজ, নারীবাদ, শিক্ষাব্যবস্থা সবকিছুতেই তিনি আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসেন। জন স্টুয়ার্ট মিলের হাত ধরে ব্রিটেনে নতুন সামাজিক নীতি আসে, যার মাধ্যমে ধীরে ধীরে জনগণ সুফল লাভ করতে শুরু করে। নতুন মতবাদ অনুযায়ী সকল মানুষ (নারীসহ) সব ধরনের কাজে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছিল, যদিও সামরিক বাহিনীতে নারীদের তখনো নেওয়া শুরু হয়নি।
উনবিংশ শতকের শেষের দিকে এবং বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ব্রিটেনে 'নব উদারনীতিবাদী' নামে কিছু লোক দেখা দেন। এইসব নব উদারনীতিবাদীরা আগের উদানীতিবাদ বাতিলের পক্ষে জোর প্রচারণা চালান এবং জনগণের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক জীবনে সরকারের দায় নিতে হবে বলে ব্যাখ্যা দেন। তারা যেসব মতবাদের অবতারণা করেছিলেন সেগুলো আজ 'সামাজিক উদারনীতিবাদ' হিসেবে পরিগণিত। নব উদারনীতিবাদীদের মধ্যে ছিলেন থমাস হিল গ্রীন, লেওনার্ড হবহাউজ এবং জন এ. হবসন, ইনারা ব্যক্তি স্বাধীনতাকে অনেক গুরুত্ব দিয়েছিলেন, তারা বলেছিলেন সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনের মাধ্যমে তারা তাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌছতে পারবেন। তাদের চিন্তা অনুযায়ী জনগণের সব চাহিদাঃ খাদ্য, বস্ত্র, ঘর, চিকিৎসা, শিক্ষা, যৌনতা, বন্ধুত্ব ইত্যাদি সব মৌলিক এবং গৌণ চাহিদা মিটাতে হবে, এবং এ জন্যে ব্যক্তি স্বাধীনতা চালু করতে হবে, এসকল জিনিশ শুধুমাত্র সরকারের জোর প্রচেষ্টা দ্বারাই হতে পারে বলে তারা বলতেন।
হেনরি ক্যাম্পবেল ব্যানারম্যান (প্রধানমন্ত্রীঃ ১৯০৫-১৯০৮), হার্বার্ট হেনরি এ্যাসকুইথ (প্রধানমন্ত্রীঃ '০৮-'১৬) এবং ১৯১৬ সাল থেকে ১৯২২ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপালনকারী ড্যাভিড লয়েড জর্জ ব্রিটেনের সমাজে নব উদারনীতিবাদের আইন-কানুন চালু করেছিলেন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে ইনারাই ছিলেন ব্রিটিশ সরকারব্যবস্থার উদারনীতিবাদী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর 'লেবার পার্টি' আরেক নব উদারনীতিবাদী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে, জন ম্যানার্ড কিনেস এবং উইলিয়াম বেভারেজ যথাক্রমে নতুন অর্থনীতিতত্ত্ব এবং সামাজিক তত্ত্ব দেন।
Owlapps.net - since 2012 - Les chouettes applications du hibou