![আল জামিয়াতুল আরবিয়াতুল ইসলামিয়া জিরি আল জামিয়াতুল আরবিয়াতুল ইসলামিয়া জিরি](/modules/owlapps_apps/img/errorimg.png)
আল জামিয়াতুল আরবিয়াতুল ইসলামিয়া জিরি সংক্ষেপে জিরি মাদ্রাসা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার জিরি ইউনিয়নে অবস্থিত একটি কওমি মাদ্রাসা। এটি বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম কওমি মাদ্রাসা। দারুল উলুম দেওবন্দের শাখা হিসেবে হাটহাজারী মাদ্রাসার পর দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে ১৯১০ সালে শাহ আহমদ হাসান এই মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন। হাটহাজারী মাদ্রাসার পর এখানেই সর্বপ্রথম হাদিস শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। এটি বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের অধিভুক্ত।
শাহ আহমদ হাসান দীর্ঘসময় মাদ্রাসাটির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। মাদ্রাসার তৃতীয় মহাপরিচালক শাহ মুহাম্মদ তৈয়বের সময়ে মাদ্রাসার অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়। মাদ্রাসার বর্তমান মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মুহাম্মদ খোবাইব। ২০২১ সালে মাদ্রাসার ১১৫ তম বার্ষিক আন্তর্জাতিক ইসলামি মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
ইসলামি শিক্ষার প্রচার প্রসারে ১৯০১ সালে দারুল উলুম দেওবন্দের আদলে হাটহাজারীতে প্রতিষ্ঠিত হয় দারুল উলুম হাটহাজারী। হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রথমদিকের ছাত্রদের মধ্যে অন্যতম শাহ আহমদ হাসান। হাটহাজারী মাদ্রাসার সফলতা দেখে শাহ আহমদ হাসান এই মাদ্রাসার ন্যায় চট্টগ্রাম শহরে অথবা পটিয়াতে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার আগ্রহ দেখান। হাটহাজারী মাদ্রাসায় জামাতে উলা শ্রেণিতে পড়াকালীন তিনি বাড়িতে এসে কৈয়গ্রাম নিবাসী আশরাফ আলীর সাথে পরামর্শ করে কৈয়গ্রাম সেতুর পূর্বপ্বার্শে একটি দোকান ঘরে মাদ্রাসার সূত্রপাত করেন। হাটহাজারী মাদ্রাসায় লেখাপড়া সমাপ্ত করে তিনি আশরাফ আলীর সাথে পরামর্শ করে ১৩২৮ হিজরি মোতাবেক ১৯১০ সালে কৈয়গ্রামের চাঁদপুর রোডের পূর্বপাশে জমি ক্রয় করে একটি মাটির গুদাম ঘর তৈরি করে সেখানে মাদ্রাসার ভিত্তি রাখেন। মাদ্রাসা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মতবিরোধ হলে শাহ আহমদ হাসান সেখান থেকে চলে আসেন এবং তার সাথে আগত ছাত্রদের তিনি একটি বাদাম গাছ তলায় পড়াতে আরম্ভ করেন। পরবর্তীতে সেই বাদাম গাছতলায় মাদ্রাসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গড়ে উঠে, যেখানে বর্তমান জিরি মাদ্রাসা অবস্থিত। বাদাম গাছের নিচে প্রতিষ্ঠিত এই মাদ্রাসার নাম ছিল মাদ্রাসা হামিয়্যাতুল ইসলাম, জিরি, আরও পরে আল-মাদ্রাসাতুল আরাবিয়্যা জিরি এবং আরও পরে বর্তমান নামটি ধারণ করা হয়।
জামেয়ার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অদ্যাবধি ১১৩ বছরে চারজন পরিচালকের পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৪০৭ হিজরিতে তৃতীয় পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন শাহ মুহাম্মদ তৈয়ব। তার সময়কালে চার তলা বিশিষ্ট শিক্ষাভবন, পূর্ব সারির দু'তলা ও তিন তলা ভবন, দ্বীতল মেহমানখানা, নাজেরাখানা, এতিমখানা ভবন, দারুত তাফসির সারির পুরা দ্বীতল ও উত্তরের ভূতল আধুনিক ভবন, জামেয়ার বহুতল মসজিদ ও দারুল হাদিস নির্মিত হয়। ২০২০ সালের ২৪ মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি প্রায় ৩৬ বছর মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তার মৃত্যুর পর মুহাম্মদ খোবাইব মহাপরিচালক মনোনীত হন। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে আব্দুল ওয়াদুদ স্বন্দীপি শায়খুল হাদিসের দায়িত্ব পালন করেছেন। এ পর্যন্ত মাদ্রাসাটিতে ৭ জন শায়খুল হাদিসের দায়িত্ব পালন করেছেন। মাদ্রাসাটিতে যেসব মনীষী ভ্রমণ করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন: আছগর হোসাইন দেওবন্দি প্রকাশ মিয়া ছাহেব, হুসাইন আহমদ মাদানি, ক্বারি মুহাম্মদ তৈয়ব, আবুল হাসান আলী হাসানী নদভী, তাকি ওসমানি, আব্দুল মাজিদ নাদিম, আছআদ মাদানি প্রমুখ।
বর্তমানে জামেয়া জিরি থেকে সেকল প্রকাশনা প্রকাশিত হচ্ছে:
চিকিৎসালয়ের প্রয়োজনীয়তাকে সামনে রেখে জামেয়া জিরি একটি দ্বীতল শারজাহ্ চ্যারিটি হাসপাতাল নির্মাণ করে। এতে দু'জন এম.বি.বি.এস ডাক্তারের মাধ্যমে ফ্রি ঔষধপত্রসহ চিকিৎসা প্রদান করা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার প্রশিক্ষণের জন্য একটি আধুনিক প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করার পরিকল্পনা বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন।
মাদ্রাসার সমাজসেবা বিভাগের মাধ্যমে বিভিন্ন জেলা - উপজেলায় মসজিদ , মাদরাসা প্রতিষ্ঠাসহ নলকূপ , পুকুর , অযুখানা এবং গরীব অসহায় জনগণকে পুনর্বাসন করার লক্ষ্যে রিক্সা , ভ্যান , সেলাই মেশিন ও গবাদি পশু ইত্যাদি দ্বারা সহায়তা প্রদান করা হয়। জিরি ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন মাদ্রাসার একটি সমাজসেবামূলক সংগঠন।
জামিয়ায় তিনটি প্রবেশপথ আছে। শাহী গেইট জামিয়ার উত্তর দিকে অবস্থিত। এর সামনের রাস্তা জিরি মাদ্রাসা রোড নামে পরিচিত। যা চট্টগ্রামের প্রধান সড়ক আরাকান রোডের সাথে সংযুক্ত। আরাকান রোডের মিলনস্থলে একটি তোরণ আছে। যার নাম বাবুল হাসান। জামিয়ার পূর্ব দিকের গেইটের নাম বাবে নূর। অন্যটি জামিয়ার পশ্চিম দিকে অবস্থিত, এর নাম বাবে তৈয়ব।
জামিয়ার মাঝখানে একটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ রয়েছে। পুরাতন মসজিদের পরিবর্তে ২০১৮ সালের দিকে এই নতুন মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। এর নাম মসজিদে তওবা। ৩ তালার এই মসজিদে প্রায় ৫০০০ জন একত্রে নামাজ আদায় করতে পারে। মসজিদে ১টি বড় গম্বুজসহ কয়েকটি ছোট গম্বুজ রয়েছে। রমজানে এই মসজিদে প্রায় ১৫০ জন ইতেকাফ থাকে। মসজিদের একটু দূরে উত্তর পাশে মাকবারায়ে আহমদ হাসান।
২০১৮ সালের দিকে নতুন মসজিদটি নির্মাণ হলে পুরাতন মসজিদের ২য় তলাকে গ্রন্থাগারে পরিণত করা হয়। নিচতলা প্রাইমারি ছাত্রদের নামাজঘর হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই গ্রন্থাগারে অনেক দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থের সংগ্রহ আছে। গ্রন্থাগারের পরিচালক মিজানুর রহমান কাসেমী।
জামিয়ার সর্ব দক্ষিণে আছে শিক্ষাভবন। জামিয়ার প্রতিষ্ঠাতা শাহ আহমদ হাসানের নামানুসারে এই ভবনের নাম রাখা হয়েছে 'ক্বসরুল হাসান'। এটিই জামিয়ার বৃহৎ ভবন। বেশিরভাগ শ্রেণীকক্ষ এই ভবনে অবস্থিত। এর ৩য় তলায় আছে তাজবিদ ও ক্বিরাত বিভাগ।
জামিয়ায় ৩ তলা বিশিষ্ট ২টি ও ২ তলা বিশিষ্ট ২টি ছাত্রাবাস আছে। উত্তর ভবনের ৩য় তলায় হেফজখানা ও এতিমখানা। পশ্চিমভবনের ২য় তলায় ফতোয়া বিভাগের শ্রেণীকক্ষ। মসজিদের উত্তর পাশে নবনির্মিত ভবনের ৩য় তলা ছাত্রাবাস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর নিচতলা দারুল হাদিসের দরসগাহ।
জামিয়ার ভিতরে ২টি মাঠ আছে। মসজিদ সংলগ্ন মাঠে দুইদিন ব্যাপী আন্তর্জাতিক ইসলামি মহাসম্মেলনসহ যাবতীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অন্য মাঠটি শিক্ষাভবনের সামনে। জামিয়ার মালিকানাধীন ২টি পুকুর আছে। একটি শিক্ষাভবনের সামনে, অন্যটি শাহী গেইটের সামনে। আরেকটি পুকুর আছে আংশিক মালিকানাধীন, যা মৎস চাষে ব্যবহৃত হয়।
জামিয়াই অধ্যয়নের ক্ষেত্রে এমন একটি পাঠ্যক্রম চালু করার লক্ষ্য রয়েছে যা ইসলামী ধর্মতত্ত্বের নিখুঁততার পাশাপাশি আধুনিক বৈজ্ঞানিক প্রয়োজন অনুসারে জ্ঞান অর্জনের সুযোগ দিতে পারে যাতে ফলপ্রাপ্তরা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিজেকে সামঞ্জস্য করতে পারে এবং তারা যেখানেই বাস করুক না কেন, নিজেকে ইসলামের যোগ্য অনুসারী এবং দেশের আদর্শ নাগরিক হিসাবে প্রমাণ করতে পারে। তদনুসারে, আরবী এবং মাতৃভাষাকে ইসলামী শরিয়াহর প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়ার সাথে অধ্যয়নের পাঠ্যক্রমগুলিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও রয়েছে যা শিক্ষার্থীদের একটি স্বনির্ভর মানুষ হিসাবে তাদের ক্যারিয়ার গড়তে সহায়তা করে। বর্তমানে এর ৬৫ জন শিক্ষক এবং ২৫০০ শিক্ষার্থী রয়েছেন যার মধ্যে ১০০০ অনাথ। জামিয়াহ এই অঞ্চলের কয়েকটি ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধান করে যাতে তারা তাদের পাঠ্যক্রমিক কার্যক্রমের উন্নতি করতে পারে।
শতবর্ষী জিরি মাদ্রাসার একাডেমিক গ্রেড প্রাথমিক স্তর, মাধ্যমিক স্তর, উচ্চ মাধ্যমিক স্তর, স্নাতক স্তর, মাস্টার্স স্তর এবং তাহফিজুল কুরআন স্তর নিয়ে গঠিত। জামিয়াহ প্রযুক্তিগত জ্ঞানসহ বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি সরবরাহ করে। শিক্ষাগত বিষয়গুলি হ'ল আল-কুরআন, আল- হাদীস, তাফসির, বালাগাত, আল-ফিকহ, উসুল-আল-ফিকহ, ফলসাফাহ, হিকমাহ, আরবি সাহিত্য, বাংলা সাহিত্য, মানতেক(যুুুক্তিবিদ্যা), তাজবিদ, ইসলামী দর্শন, তাহফিজ-আল -কুরআন, গণিত, সামাজিক বিজ্ঞান ইত্যাদি। এইগুলির পাশেই জামিয়াহ কিছু প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ কোর্স যেমন বুক বাইন্ডিং, টাইপিং, ওয়াচ রিপেয়ারিং, দর্জি কাজের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি‘আতিল কওমিয়া বাংলাদেশের অধীনে। বাকি কেন্দ্রীয় পরীক্ষাগুলো বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়।
ফতোয়া ও ইসলামী গবেষণা বিভাগ। জামিয়ার পূর্বভবনের ২য় তলায় এই বিভাগটি অবস্থিত। দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স) পাশের পর এই বিভাগে ভর্তির আবেদন করা যায়। কোর্সের মেয়াদ ১ বছর। মোট ৩ জন ইসলামী আইনজ্ঞের অধীনে বিভাগটি পরিচালিত হয়।
ক্বেরাত ও তাজবিদ বিভাগ শিক্ষাভবনের ৩য় তলায় অবস্থিত। ২ জন ক্বারীর অধীনে এই বিভাগ পরিচালিত হয়। দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স) পাশের পর এই বিভাগে আবেদন করা যায়। কোর্সের মেয়াদ ১ বছর।
আরবি সাহিত্য ও গবেষণা বিভাগ বা আদব বিভাগ। জামিয়ার উত্তর ভবনের ২য় তলায় এই বিভাগটি অবস্থিত। দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স) পাশের পর এই বিভাগে আবেদন করা যায়। কোর্সের মেয়াদ ১ বছর। মোট ৩ জন আরবি ভাষাবিদের অধীনে বিভাগটি পরিচালিত হয়।
জামিয়ার পৃষ্ঠপোষকতা ও অর্থায়নে এক শতাধিক মসজিদ ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
Owlapps.net - since 2012 - Les chouettes applications du hibou